তৃণমূলের শিবিরে নিভে যাওয়ার পথে আরও এক দেউটি। বেশ কয়েক মাস ধরে দলের কোনও কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন না তিনি। বিজেপি-তে যেতে পারেন বলে জল্পনা চলছে। তবে সে জল্পনা নিয়ে কিছুতেই মুখ খুলছেন না। ভাবখানা এমন, যেন প্রয়োজনই বোধ করছেন না মুখ খোলার। শোভনের এই আপাত-নিষ্ক্রিয়তা একটু হলেও স্বস্তিতে রেখেছিল তৃণমূলকে। কিন্তু দুঁদে রাজনীতিক আর চুপচাপ বসে নেই। দলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ালেও এত দিন নিজেকে বিজেপির নাগালের বাইরেই রেখেছিলেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু এ বার নড়েচড়ে বসতে শুরু করেছেন শহরের প্রাক্তন মেয়র তথা সবচেয়ে পুরনো কাউন্সিলর। পুর নির্বাচনের দুন্দুভি বেজে ওঠার কয়েক মাস আগেই বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক সেরে ফেলেছেন শোভন।
রাজ্যের মন্ত্রিত্ব এবং কলকাতার মেয়র পদ থেকে শোভন চট্টোপাধ্যায় ইস্তফা দেন চলতি বছরের গোড়ায়। দলের কোনও কর্মসূচিতে যোগ দিতে যে আর আগ্রহী নন, তা-ও স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিতে শুরু করেন। স্বাভাবিক কারণেই কয়েক মাসের মধ্যে জল্পনা তৈরি হয় যে, শোভন চট্টোপাধ্যায় যাচ্ছেন বিজেপিতে। লোকসভা নির্বাচন যত কাছে আসছিল, সে জল্পনা ততই বাড়ছিল। লোকসভা নির্বাচনে তিনি বা তাঁর বান্ধবী তথা মিল্লি আল-আমিন কলেজের অধ্যক্ষা বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির টিকিটে প্রার্থী হতে পারেন, এমন কথাও শোনা যাচ্ছিল। সে সব যে নিছক উড়ো কথা ছিল, তা কিন্তু নয়। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে সে সময়ে বৈঠক হয়েছিল বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এক সাংবাদিক বৈঠকে সে কথা বৈশাখী স্বীকারও করেছিলেন। তবে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত যে নেননি, তা-ও স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন। সঙ্গে আবার এ-ও বলেছিলেন যে, ‘‘এখনই বিজেপিতে যাচ্ছি না মানে এই নয় যে কখনও যাব না।’’
অর্থাৎ সব পথই যে খোলা রয়েছে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সামনে, সে কথাই লোকসভা নির্বাচনের আগের সেই সাংবাদিক বৈঠকে বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন বৈশাখী। কিন্তু এ বার ইঙ্গিত বদলে গেল। আনন্দবাজারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বললেন, ‘‘শোভন চট্টোপাধ্যায় মনে করছেন যে, মা-মাটি-মানুষের দল এখন মানুষের থেকে বিচ্ছিন্ন। তাঁকে যতটা চিনি, তাতে আমার মনে হয় যে, এই জায়গাটায় কোনও আপস তিনি করবেন না।’’
কয়েক সপ্তাহ আগে দিল্লি গিয়েছিলেন শোভন চট্টোপাধ্যায় ও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে বৈশাখীর পরিজনরাও ছিলেন। সেই দিল্লি সফর নিয়ে শোভন কোথাও মুখ খোলেননি। আর বৈশাখী বলেছিলেন, নিতান্তই ব্যক্তিগত কাজে সেই দিল্লি সফর। কিন্তু লোকসভা নির্বাচন মেটার পরে শোভন-বৈশাখীর বিজেপি-গমন নিয়ে জল্পনা যখন ফের বাড়ছে, ঠিক তখনই তাঁরা দিল্লিতে গেলে রাজনৈতিক চর্চা স্বাভাবিক কারণেই বাড়ে। জল্পনার সেই আগুনে এ বার আরও একটু অক্সিজেন জুগিয়ে দিলেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। সাক্ষাৎকারে তিনি বললেন, ‘‘আমি ব্যক্তিগত কাজেই দিল্লি গিয়েছিলাম। শোভন চট্টোপাধ্যায় কী কারণে গিয়েছিলেন, সেটা তিনিই বলবেন। সময় হলেই বলবেন।’’
বিজেপি সূত্রের খবর, দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে কথাবার্তা অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে শোভন-বৈশাখীর। লোকসভা নির্বাচনের আগে কথা হচ্ছিল শুধু বৈশাখীর সঙ্গে। এ বার শোভন চট্টোপাধ্যায় নিজেও কথাবার্তায় অংশ নিয়েছেন বলে খবর। গত শনিবার পর্যন্ত যিনি বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) পদে ছিলেন, সেই রামলালের সঙ্গেই শোভন-বৈশাখীর বৈঠক হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। সে বৈঠক খোদ অমিত শাহ এবং জে পি নাড্ডার সম্মতিক্রমেই হয়েছে বলেও খবর। বিজেপি সূত্রে আরও জানা গিয়েছে যে, বৈঠক শেষে শোভন-বৈশাখীর সঙ্গে রামলাল আলাপ করিয়ে দেন বি এল সন্তোষের, যিনি গত রবিবার থেকে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) হিসেবে কাজ শুরু করেছেন।
বিজেপির তরফ থেকে এই রকম কোনও বৈঠকের কথা আনুষ্ঠানিক ভাবে জানানো হয়নি। আবার সে বৈঠকের খবর নস্যাৎও করা হয়নি। শোভন চট্টোপাধ্যায়ের অবস্থানও একই রকম। তবে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় সেই আগের মন্তব্যের সুরেই বলেছেন, ‘‘কার সঙ্গে বৈঠক হয়েছে বলছি না। তবে এ কথা ঠিক যে, আমার সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। আগেও হয়েছিল। সম্প্রতিও হয়েছে। শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে কি না, সেটা শোভন চট্টোপাধ্যায় নিজেই বলবেন।’’
শোভনের ঘনিষ্ঠরা বলছেন যে, তিনি ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা সম্পর্কে মনস্থির করেই ফেলেছেন। শোভন মেয়র পদ ছাড়ার পরেও কলকাতা পুরসভার বেশ কিছু কাউন্সিলর নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন তাঁর সঙ্গে। পুরভোট যত এগিয়ে আসছে, যোগাযোগ রাখা কাউন্সিলরের সংখ্যা ততই বাড়ছে বলে খবর। তৃণমূলের হয়ে নতুন করে সক্রিয় হয়ে উঠুন শোভন, এমন কোনও দাবি বা আর্জি নিয়ে কিন্তু এই যোগাযোগ নয়। বরং উল্টো দাবিই উঠছে। শোভনও এ বার অনুগামী ও ঘনিষ্ঠদের উদ্দেশে নতুন লড়াইয়ের জন্য কোমর বাঁধার বার্তা দিতে শুরু করেছেন বলে খবর।
সে প্রসঙ্গেও তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেছেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, ‘‘কলকাতা শহরটাকে শোভন চট্টোপাধ্যায় যে রকম রন্ধ্রে রন্ধ্রে চেনেন, সে রকম আর ক’জন চেনেন আমার জানা নেই। কিন্তু কলকাতার পুর পরিষেবা শোভন চট্টোপাধ্যায়ের আমলে কী রকম ছিল আর এখন কী রকম, সেটা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। স্বাভাবিক কারণেই শোভন চট্টোপাধ্যায়কে মেয়র পদে আবার দেখতে অনেকেই উদগ্রীব। আমার মনে হয়, তাঁদের কথা ভেবেই আর একটা চ্যালেঞ্জ নেওয়া উচিত শোভনদার। সে চ্যালেঞ্জে হার হবে না জয় হবে, সেটা বড় কথা নয়। গণতন্ত্রে একটা জোরদার বিকল্প হয়ে উঠতে পারাটাই বড় কথা। চ্যালেঞ্জটা নেওয়া জরুরি এবং চ্যালেঞ্জ নেওয়া থেকে পিছিয়ে আসার মতো নেতা তিনি যে কোনও কালেই নন, মন্ত্রিত্বে আর মেয়র পদে ইস্তফা দিয়েই সেটা শোভন চট্টোপাধ্যায় প্রমাণ করে দিয়েছিলেন।’’
কিন্তু মেয়র পদে ফিরতে হলে তো তৃণমূলের তরফ থেকেই ফেরা যায়। রাজ্যের শাসক দল প্রকাশ্যে কিছু না বললেও, শোভন চট্টোপাধ্যায়কে ফেরানোর চেষ্টা যে তাঁরা খিড়কির দরজা দিয়ে চালাচ্ছেন, সে কথা তো আর গোপন নেই। এমনকী, প্রয়োজনে শোভনই আবার মেয়র পদে ফিরবেন, এমন প্রস্তাবও কোনও কোনও মহল থেকে গিয়েছে বলে রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের দাবি। কিন্তু সে সব প্রস্তাব এখন পত্রপাঠ প্রত্যাখ্যান করছেন শোভন ঘনিষ্ঠরা। যেমন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘তৃণমূলের হয়ে আবার মেয়র পদে ফিরতে শোভন চট্টোপাধ্যায় আগ্রহী হবেন বলে আমার মনে হয় না। তৃণমূল নেতৃত্ব মনে করেছিলেন যে ওই পদে ওঁকে আর দরকার নেই, সেই কারণেই নিশ্চয়ই ইস্তফা দিতে বলেছিলেন। এখন যদি শোভন চট্টোপাধ্যায় আবার তৃণমূলের হয়েই মেয়র পদে ফেরেন, লোকে কী বলবে? এক জনকে দেখে কলকাতার মানুষ ভোট দিলেন। আর এক জনের খামখেয়ালিপনায় হঠাৎ তাঁকে সরতে হল। অন্য এক জন মেয়র হয়ে বসলেন। এর পরেও কোন মুখে শোভনদা তৃণমূলের হয়ে মানুষের দরজায় যাবেন? লোকে বলবে, আপনাকে দেখে ভোট দিয়েছিলাম, মাঝ পথে তো আপনাকে সরিয়ে দিল, আবার তো সে রকমই ঘটতে পারে।’’ তা হলে কি শোভন চট্টোপাধ্যায়ের দরজা তৃণমূলের জন্য বন্ধ? বৈশাখী বললেন, ‘‘এতগুলো মাস ধরে শোভন চট্টোপাধ্যায়কে দেখেই সেটা বুঝে যাওয়া উচিত। দুর্যোগ, অসুস্থতা, সুসময়, দুঃসময়— সব উপেক্ষা করে রাত দিন যিনি শুধু দল নিয়ে পড়ে থাকতেন, কতটা গূঢ় অভিমান হলে তিনি মাসের পর মাস দলের সঙ্গে সব সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখেন, সেটা বোঝা দরকার।’’ এ ‘অভিমান’ যে ভাঙার নয় এবং যাঁরা বলেছিলেন ‘শোভন চট্টোপাধ্যায় শেষ হয়ে গিয়েছেন’, তাঁদের যে জবাব দেওয়া দরকার, কথায় কথায় তা-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন বৈশাখী।
তা হলে আটকাচ্ছে কোথায়? প্রচণ্ড ‘অভিমানে’ তিনি মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন তৃণমূলের দিক থেকে। তৃণমূল এখন ‘জনবিচ্ছিন্ন’ বলে তিনি মনে করছেন। ‘অপমানের’ জবাব দিতে এবং অনুগামীদের দাবি মেনে নতুন ‘চ্যালেঞ্জ’-এর জন্য কোমর বাঁধতেও তিনি প্রস্তুত বলে শোনা যাচ্ছে। বিজেপির দিক থেকে সম্মানজনক প্রস্তাব তো লোকসভা নির্বাচনের আগে থেকেই রয়েছে। সম্প্রতি বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বৈঠকও হয়ে গেল বলে খবর। এর পরেও কোথায় আটকে যাচ্ছে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটা? বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহাস্য জবাব, ‘‘বিষয়টা আটকে যাওয়ার নয়। আমার মনে হয় তিনি সঠিক সময়টার জন্য অপেক্ষা করছেন। সঠিক সময় এলেই তিনি সঠিক সিদ্ধান্তটা নিয়ে নেবেন।’’
দেশে কোভিড আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা ১৫০০ ছাড়াল। আরো পড়ুন
পার্থ চট্টোপাধ্যায়, কুণাল ঘোষের পর পূর্বতন বাম সরকারকে একহাত নিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। আরো পড়ুন
নিজেকে নির্দোষ দাবি করে জামিন চেয়েছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। আরো পড়ুন
পুরীতে গিয়ে বাঙালির হোটেল না পাওয়ার ভোগান্তি কমাতে চান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আরো পড়ুন
মরিয়া চেষ্টাই সার, শেষপর্যন্ত তিহাড় জেলেই যেতে হচ্ছে অনুব্রত মণ্ডলকে (Anubrata Mandal) । আরো পড়ুন
ইডি সূত্রে আগেই জানা গিয়েছিল, নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত কুন্তলের একাধিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে বিপুল পরিমাণ আর্থিক লেনদেন হয়েছে। আরো পড়ুন
ভারতের দৈনিক করোনা সংক্রমণের সংখ্যা চার মাস পরে আবার সাতশো পার করল। আরো পড়ুন
নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত হুগলির দুই তৃণমূল নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কুন্তল ঘোষকে পার্টি থেকে বহিষ্কার করল তৃণমূল। আরো পড়ুন
অগ্নিবীর নিয়োগের পদ্ধতিতে এল বদল। এবার থেকে আগে অনলাইন পরীক্ষা, পরে রিক্রুটমেন্ট ব়্যালি, মেডিক্যাল টেস্ট। আরো পড়ুন